মুক্তির মন্ত্র :

আমরা সকলেই মুক্তি চাই। কি থেকে মুক্তি? এই দেহ থেকে। আমরা গীতা থেকেই জানতে পেরেছি, ৮৪ লক্ষ জন্ম পার হয়ে, মানব শরীর পেয়েছি। এখন আমরা যারা মানব শরীরে আছি, আমরা চাইলেই শরীর টা সম্পূর্ণ রূপে ত্যাগ করে চিরো কালের জন্য মুক্তি পেতে পারি। আবার যেদিন ইচ্ছা সে দিনই এই শরীর ত্যাগ করতে পারি। ঋষি অরবিন্দ, ঠাকুর রামকৃষ্ণ পরমহংস তার জ্বলন্ত উদাহরন।

আধ্যাত্মিক সাধনার মাধ্যমে শরীর ও আত্মা কে আলাদা করে বুঝতে পারা যায়। আত্মার যেমন কোনো লিঙ্গ হয় না, সে রকম শরীর কোন্ লিঙ্গের, সেটা নিয়ে না ভাবলে, অর্ধেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। যেমন ডাক্তার তার অপারেশন টেবিলে শুধু একটা শরীরকে দেখে আর রোগ নিরাময়ের জন্য এক মনে ছুরিটা চালিয়ে রুগীর প্রাণ রক্ষা করে। আবার সেই ছুরি নিয়ে একজন খুনী শরীর থেকে প্রাণ হরণ করে, তাদের শরীরের লিঙ্গের দিকেও কু-নজর থাকে।

এখন প্রশ্ন হলো,ডাক্তার প্রাণ রক্ষা করছে আর খুনী প্রাণ নষ্ট করছে। দুজনেই তো মানুষ! তাহলে এই কাজ টা করতে কে তাদের সাহায্য করছে?

ঠিক বলেছেন, মন সাহায্য করছে। আর এই মনকে নিয়েই মন্থন ইন্ডিয়ার কাজ। (লেখকের একটা organization)

আমাদের দিন শুরু করতে হবে ধ্যান, আধ্যাত্মিক আলোচনা ও শরীর চর্চার মাধ্যমে। তারপর বিভিন্ন সামাজিক কাজের মধ্যে দিয়ে দিনের পরিসমাপ্তি করে ,প্রতিদিনের একটা হিসাব কিতাব করে দেখতে হবে, আমরা আমাদের কার্মিক অ্যাকাউন্টে কত ক্রেডিট জমা করলাম। মনে রাখতে হবে কার্মিক অ্যাকাউন্টের ব্যালেন্সের উপর আমাদের পজিশন নির্ধারিত হয়। আর এটা অনুভব করতে পারলেই, calculation টা করা যায়। এটা জেনে রাখার বিশেষ প্রয়োজন আছে যে, কার্মিক অ্যাকাউন্টের ব্যালেন্স সব সময় মাইনাসে থাকে। ওটা কে যে দিন zero তে নিয়ে আসতে পারবো, সেদিনই পীড়াদায়ী শরীর থেকে চিরো কালের জন্য মুক্তি পাওয়া যাবে। ব্যাপার টা কত সহজ না! তার জন্যে কি পুঁথিগত বিদ্যার দরকার পড়বে? শুধু ব্রহ্মজ্ঞানের দরকার পড়বে। (ব্রহ্মজ্ঞান কি করে পাপ্ত হয়, সেটা নিয়ে পরে আলোচনা করা যাবে)

আমরা জানি এই মানব শরীর পাওয়ার আগে আমাদের ৮৪ লক্ষ বার জন্ম নিতে হয়েছিল। এখন আমরা জন্ম, ব্যাধি ও মৃত্যুর জেল খানার দরজার গোড়ায় এসে গেছি। এখানে সিদ্ধান্ত নেবার প্রয়োজন এসে গেছে:
১) আমরা আবার ওই জেলখানায় ফিরে যাবো কি না।
মানব শরীর পাওয়ার পরও যদি পশুর মত ব্যবহার করি, তাহলে আবার আমাদের পশুর জন্মে ফিরে যেতে হবে।

২) আমরা জন্ম, ব্যাধি ও মৃত্যুর চক্রব্যুহ থেকে কি ভাবে মুক্তি নেব?
আমরা অনেকে ১৬ কলা পুরনের কথা শুনেছি। হ্যাঁ ঠিকই শুনেছেন, এই ১৬ কলা যদি পূর্ণ করতে পারি তাহলেই আমরা জন্ম, ব্যাধি ও মৃত্যুর চক্রব্যুহ থেকে মুক্তি পাবো। মানে আমাদের আত্মা আর শরীর ধারণ না করে ঈশ্বরের চরণে বিলীন হয়ে যাবে। আর এর সবটাই নিজের হাতে। চেষ্টা করলেই সফল হওয়া যাবে।

১৬ কলার বিবরণ নীচে দেওয়া হলো:

১) পবিত্রতা (Cleanliness)
২) মধুরতা বা মাধুরী (Sweetness)
৩) অকৃপণ বা কৃপণতা মুক্ত (Free from Miserliness)
৪) সন্তুষ্টি (Satisfied)
৫) পরোপকারী (Benevolent)
৬) নিয়মিততা (Regularity)
৭) উদারতা (Kindness)
৮) নম্রতা (Humility)
৯) প্রেম (Love)
১০) ক্ষমাশীলতা (Forgiveness)
১১) শুভ ভাবনা ( Good Thinking)
১২) সহনশীলতা (Endurance)
১৩) সততা (Honesty)
১৪) আজ্ঞাবাহী (Obedient)
১৫) কল্যাণকামী (Delightful)
১৬) ধৈর্য্যশীল (Patient)

এবার ভগবত গীতা সমন্ধে কিছু তথ্য নিয়ে আলোচনা করা যাক।

ভগবত গীতায় 18টি অধ্যায় এবং 700টি শ্লোক রয়েছে। এর মধ্যে 574টি কৃষ্ণ, 84টি অর্জুনের দ্বারা এবং 41টি সঞ্জয় দ্বারা প্রসব করা হয়েছে। একটি শ্লোক—প্রথমটি—ধৃতরাষ্ট্র কথিত।

“গীতা” শব্দ সংস্কৃত ভাষায় উপন্যাস বা গ্রন্থ বোঝাতে ব্যবহৃত হয়, যেখানে ধর্মীয় বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করা হয়। মূলত এটি হিন্দুধর্মের পবিত্র গ্রন্থ শ্রীমদ্ভগবদগীতা বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। গীতা বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন ধর্ম সম্প্রসারণ এর সাথে সাথে বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে।

ভগবদ্গীতা সংস্কৃত ভাষায় রচিত একটি কাব্য। এর 700টি শ্লোক বেশ কয়েকটি প্রাচীন ভারতীয় কাব্যিক মিটারে গঠন করা হয়েছে, যার প্রধানটি হল শ্লোক (অনুষ্টুভ চন্দ)। এতে মোট 18টি অধ্যায় রয়েছে। প্রতিটি শ্লোক একটি দম্পতি নিয়ে গঠিত, এইভাবে সমগ্র পাঠ্যটি 1,400টি লাইন নিয়ে গঠিত।

হিন্দু ধর্মীয় গ্রন্থে শ্রীমদ্ভগবতের বিশেষ মাহাত্ম্য স্বীকৃত। কথিত আছে যে গীতা পাঠ করলে ব্যক্তি পুণ্য ফল লাভ করে ও তাঁদের সমস্ত পাপ নষ্ট হয়। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী প্রতিদিন শ্রীমদ্ভগবত গীতা পাঠ করলে ব্যক্তি সমস্ত সমস্যা মোকাবিলা করার শক্তি সঞ্চয় করতে পারে। পাশাপাশি ব্যক্তির আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পায়।

এই মানব জীবনের উদ্দেশ্য হল আমরা এই দেহ নই, বরং আমরা স্বভাবগতভাবে আধ্যাত্মিক এবং পরমেশ্বর ভগবানের চির দাস । এটা বোঝার মাধ্যমে আমাদের ঈশ্বরের সাথে আমাদের হারানো প্রেমময় সম্পর্ককে পুনরুজ্জীবিত করতে হবে।

Gita declares God to be Krishna, the Supreme Person. He is not judgmental or envious but a loving and lovable person. The sweetest aspect of Bhagavad Gita is that it glorifies the relationship between Krishna and His devotees – how they serve Him unconditonally and how He reciprocates with them affectionately.

বর্তমান জীবনে ভগবত গীতার গুরুত্ব: নিঃস্বার্থ সেবা এবং মানবজাতির সেবা ভগবদ্গীতার মাধ্যমে মানুষের কাছে পৌঁছে যায় এবং পাঠ এবং এর অনুশীলন আমাদের মহৎ ব্যক্তি করে তোলে যাতে আমরা নিঃস্বার্থ নিষ্ঠার সাথে কাজ এবং কর্তব্য পালন করি। এটি আমাদের কাজ করতে এবং একজন সাধুর মতো পৃথিবীতে বসবাস করতে শেখায় এবং সাহায্য করে ।

Everything in our life should be balanced . প্রয়োজনের বেশি ঘুমাবেন না , বেশি খাবেন না বা কম খাবেন না ইত্যাদি। আপনি জীবনে যাই করুন না কেন নিখুঁত ভারসাম্য এবং সাদৃশ্য বজায় রাখুন। সবকিছু একটি কারণে ঘটে: কৃষ্ণ বলেছিলেন যে আমরা সকলেই ঈশ্বরের সন্তান, একমাত্র সৃষ্টিকর্তা।

শাস্ত্রীয় বিবরণ ও জ্যোতিষ গণনার ভিত্তিতে লোকবিশ্বাস অনুযায়ী কৃষ্ণের জন্ম হয়েছিল ৩২২৮ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ১৮ অথবা ২১ জুলাই বুধবার। কৃষ্ণের জন্মদিনটি কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী বা জন্মাষ্টমী নামে পালিত হয়। কৃষ্ণ যাদব-রাজধানী মথুরার রাজপরিবারের সন্তান। তিনি বসুদেব ও দেবকীর অষ্টম পুত্র। ভগবান কৃষ্ণ 21-07-3227 খ্রিস্টপূর্বাব্দে জন্মগ্রহণ করেন এবং 18-02-3102 খ্রিস্টপূর্বাব্দে মৃত্যুবরণ করেন। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ 125 বছর বেঁচে ছিলেন।

হিন্দু পুরাণ অনুসারে বসুদেব হলেন যদুবংশীয় শূরসেনের পুত্র এবং কৃষ্ণের পিতা। বসুদেবের ভগিনী কুন্তী হলেন পাণ্ডুর স্ত্রী, যিনি মহাভারতে এক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রীয় চরিত্র। পুরাণ অনুসারে, বসুদেব হলেন ঋষি কশ্যপের অংশ অবতার। পিতার নামানুসারেই কৃষ্ণের এক নাম হল বাসুদেব।

শ্রীকৃষ্ণ, বিষ্ণুর অষ্টম অবতার এবং নিজের অধিকারে সর্বোচ্চ ঈশ্বর হিসাবেও পূজিত হন। তিনি সুরক্ষা, করুণা, কোমলতা এবং প্রেমের দেবতা ; এবং হিন্দু দেবতাদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং ব্যাপকভাবে সম্মানিত।

ভগবদ-গীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণের দ্বারা বলা হয়েছিল ঈশ্বরের প্রতি ভক্তির বিজ্ঞান প্রকাশ করার জন্য ,যা সমস্ত আধ্যাত্মিক জ্ঞানের সারাংশ।” অবতীর্ণ এবং অবতারণের জন্য পরম ভগবান কৃষ্ণের প্রাথমিক উদ্দেশ্য হ’ল আধ্যাত্মিক এবং নেতিবাচক, অবাঞ্ছিত প্রভাবগুলি থেকে বিশ্বকে মুক্তি দেওয়া যা আধ্যাত্মিকতার বিরোধী।

সবচেয়ে বড় বিষয় হলো গীতা তে আপনি কি পেয়েছেন?

১. একজন কৃষ্ণভক্তকে জিজ্ঞাসা করা হলো-আপনি গীতা পড়ে কি পেলেন?
সে উত্তরে বললো-গীতায় আছে ভক্তি।।

২. একজন দার্শনিক কে প্রশ্ন করা হলো-আপনি গীতা পড়ে কি পেলেন?
সে বলল- গীতাতে রয়েছে দার্শনিক জ্ঞান।।

৩. একজন সন্নাসীকে প্রশ্ন করা হলো-আপনি গীতা পড়ে কি পেলেন?
সে বললো-গীতাতে পেয়েছি ত্যাগের শিক্ষা।

৪. একজন সাধক কে প্রশ্ন করা হলো-আপনি গীতা পড়ে কি পেলেন?
সাধক বললেন-গীতাতে আছে মোক্ষ।।

৫. আর যখন আমার মতো একজন সৈনিক/যোদ্ধা কে জিজ্ঞাসা করা হলো-আপনি গীতা পড়ে কি পেলেন?
উত্তরে আমি এই কথাই বলবো যে, গীতার প্রতিটা শ্লোকে শ্লোকে কেবল একটা জিনিসই পেয়েছি-তা হলো:

a) অন্যায় আর অধর্মের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে।।
b) সত্য/ধর্মকে প্রতিষ্ঠা করতে হবে।।
c) আর এতেই রয়েছে ভক্তি, দর্শন, ত্যাগ আর মোক্ষ।।
d) কারন যদি সত্যকেই উদ্ধার/উন্মুক্ত করতে না পারি, তাহলে ভক্তি ও ত্যাগের কথা বাতুলতা মাত্র।।
e) পরাধীনতার শৃঙ্খল হতে মুক্ত হতে না পারলে ত্যাগ আর মোক্ষ মিথ্যাচার।।
f) কিন্ত যদি সত্যের প্রতিষ্ঠা হয়! তাহলে ভক্তি, দর্শন জ্ঞান, ত্যাগ, মোক্ষ সকলই পালন করা সম্ভব।।
g) তাই আমি গীতাতে কেবল অন্যায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার শিক্ষাই পেয়েছি আর এটাই আমার নিকট ধর্ম।।

 

গীতা এমন একটি শাস্ত্র!যার মধ্যে যে যা চায়! সেটাই পেতে পারে।। যে যে পথে যেতে চায় সে সেই পথই খুজে পেতে পারে।।
গীতায় ভক্তি, জ্ঞান ও কর্মের সাধন রয়েছে আর কর্মই হলো সৈনিকের পথ।

হরে কৃষ্ণ
জয় গীতা
জয় ভারতবর্ষ

 

Leave A Comment